নিজস্ব প্রতিবেদক ::‘সিসমিক মুভমেন্ট বা সঞ্চারণ’ প্রতিপাদ্য দিয়ে শুরু হলো ঢাকা আর্ট সামিটের ৫ম সংস্করণ। এক ছাদের নিচে বিশ্বের নানা প্রান্তের নানা মেজাজ ও শিল্পের বহুমাত্রিক কাজ দেখার বিরল সুযোগ করে দিতে ২০১২ সাল থেকে এই সামিটের আয়োজন করে আসছে সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন ও শিল্পকলা একাডেমি। চারবারের সফল আয়োজনের পর এবার বসলো ৫ম আসর।
শুক্রবার পর্দা উঠল বহুল আলোচিত ঢাকা আর্ট সামিটের ৫ম সংস্করণের। ৯ দিনের এ শিল্পকলার আসরে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৫০০-এর অধিক চিত্রশিল্পী-ভাস্কর, কিউরেটর, শিল্প-সমালোচক, আর্ট প্রফেশনাল, শিল্প-সংগ্রাহক ও স্থপতি। এই শিল্প সম্মেলনে এশীয় চিত্রকলার বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পীর শিল্পকর্ম দেখার যেমন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি রয়েছে শিল্পীর সঙ্গে শিল্পবোদ্ধা কিংবা শিল্পরসিকের সঙ্গে শিল্পীর জানাশোনার সুযোগ।
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আর্ট সামিটের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বক্তব্য রাখেন ঢাকা আর্ট সামিটের চেয়ারম্যান ফারুক সোবহান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের কো ফাউন্ডার ও পরিচালক নাদিয়া সামদানী। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এই প্রদর্শনী বিশ্বের সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় চিত্রকলার সবচেয়ে বড় আয়োজন হওয়ায় এ নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি।বক্তারা বলেন, শিল্পমনা জাতি হিসেবে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। ঢাকা আর্ট সামিট শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্ব প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ।
সামিটের অংশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সাজানো হয়েছে একটি বিশেষ প্রদর্শনী। একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার প্রথম তলায় চলছে ‘লাইটিং দি ফায়ার অব ফ্রিডম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে সেই প্রদর্শনীর। এই প্রদর্শনীর সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (CRI) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (ICT) ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
সামিটে অংশ নেয়া শিল্পী, সমালোচক ও আলোচকদের মধ্যে রয়েছেন- দিলারা বেগম জলি, রোকেয়া সুলতানা, সেলিমা কাদের চৌধুরী, লুইস হ্যান্ডারসন, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, আরিফুল কবির, ইয়াসমিন জাহান নূপুর, হেক্টর জামোরাহ, সালেহ হাসান, রাফেল হেফটি, টনি কোকস, রশিদ চৌধুরী, শেনাই জাভেরি, থেরেসে চৌধুরী খান, মরগান কোয়ানট্যান্সে, আয়ো আকিনবেদ, রেহানা জামান, এসি এশুন, ড. অর্নব বিশ্বাস, সাজেদুল হক, অ্যানা পাই, আনিয়কায় ইগনে, ফায়হাম ইবনে শরীফ, আলফ্রেড সান্টানা, শীন অ্যান্ডারসন, ফারহান করিম, সাইম সুন, নূরুর রহমান খান, জয়দেব রওজা, অঞ্জলিকা সাগর, রানিয়া স্টেফেন, কৌদ ইশুন, মুস্তাফা জামান, স্নেহা রাগাভান, শায়লা শারমিন, মাহমুদুল হাসান দুলাল, ইফতিখার দাদি, সামিনা ইকবাল, মিং টিয়ামপো, রাফায়েল গ্রিসে, বোবা টোরে, লুটা-তা কাবা ইন্দ্রি, শিমুরেনজা, সালমান নাওয়াতি, কাদ্দু ইয়ার্যাক্স, হ্যাডিল অ্যাশলি, মোহাম্মদ হার্ব, এলিজাবেথ প্রভিনীল, জন টাইন, চৌং-ডাল বো, লোট্টে হিয়েক, এলিজাবেথ জর্জিস, সংযুক্ত স্যান্ডারসনসহ আরও অনেকে।
অ-বাণিজ্যিক এই সামিটে বাংলাদেশের উদীয়মান ও প্রতিভাবান শিল্পী ৩০০ জন বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন। আছেন প্রতিথযশা শিল্পীরাও। সামিটে বাংলাদেশি শিল্পীদের জন্য কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করছেন চিত্রশিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামী। তার তত্বাবধানে ‘রুটস’ বা ‘শেকড়’ শিরোনামে এক বিশেষ প্রদর্শনী রয়েছে এবারকার আয়োজনে। যেখানে প্রতিথযশা শিল্পগুরু জয়নুল আবেদিন, এস এম সুলতান, কামরুল হাসান, রশিদ চৌধুরী, রকিকুন নবী, ফরিদা জামানসহ বিশেষ করে দেশের চিত্রকলা শিক্ষাদানে অসামান্য অবদান রেখেছেন এমন শিল্পীগুরুদের জীবনাচরণ জানা ও দেখার সুযোগ মিলছে ওই প্রদর্শনীতে।
এবারও দেয়া হবে সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড। এর অংশীদারিত্বে আছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডেলফিনা ফাউন্ডেশন। তারা দীর্ঘদিন ধরে শিল্প বিনিময়ের দিকে সুনজর রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে মিডল ইস্ট, উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায়। এই দ্বিবার্ষিক সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড পাবেন বাংলাদেশের ২২ থেকে ৪০ বছর বয়সী উদীয়মান ও প্রতিভাবান শিল্পী। এরই মধ্যে অ্যাওয়ার্ডের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সামিটের উদ্বোধনী দিনে ণৈশভোজ অনুষ্ঠানে এক আড়ম্বরপূর্ণ মধ্যদিয়ে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।
তালিকায় রয়েছেন- আরিফুল কবির, আশফিকা রহমান, ফাইহাম ইবনে শরীফ, হাবিবা নওরোজ, নাজমুন নাহার কেয়া, পলাশ ভট্টাচার্যী, প্রমতি হোসেন, সোমা সুরভী জান্নাত, সৌনক দাস, সুমনা আক্তার, তাহিয়া ফারহিন হক ও জিহান করিম। ২০১৮ সালে এই অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী, ২০১৬ সালে রাসেল চৌধুরী, ২০১৪ সালে আয়েশা সুলতানা ও ২০১২ সালে খালেদ হাসান ও মুসারাত রিয়াজী।
সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ডের আর্ন্তজাতিক জুরিবোর্ড প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন ডেলফিনা ফাউন্ডেশনের পরিচালক এরন সেজার।সামিটে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের ১২টি আর্টিস্টগ্রুপ। গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে- আর্টপ্রো, ব্যাক আর্ট, চারুপীঠ, আকালিকো, গিদরি বাউলি, হিলস আর্টিস্ট গ্রুপ, যথাশিল্প, সাঁকো, শনি মঙ্গল আড্ডা অন্যতম।
সুইজারল্যান্ডের বিশিষ্ট গ্যালারি ডিজাইনার দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারকার সামিট। পরিবেশবান্ধব এই আয়োজন অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্লাস্টিকমুক্ত সাজ-সজ্জা। কোনও কিছুতেই প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়নি। এমনকি বসার আসন পর্যন্তও। পরিবেশসম্মত কাগজ, বাঁশ, বেত ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি প্রদর্শনীতে কোনও এয়ারকন্ডিশনের ব্যবহার হচ্ছে না। সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন বিশ্বাস করে যে, বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয় রোধে সবাইকেই তার নিজস্ব স্থান থেকে প্লাস্টিক পণ্য বর্জন করা ও বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে এ বিষয়ে সচেতন করা উচিৎ।
প্রদর্শনীর মূল প্রবশেপথ থেকে শুরু হবে মুগ্ধতা। ৪০০ মিলিয়ন বছরের পুরানো ব্রাজিলের ফসিল দিয়ে সেখানে একটি স্থাপনা নির্মাণ করেছেন বিখ্যাত আর্জেন্টাইন শিল্পী আদ্রিয়ান ভিলা রোজ। এই প্রবেশদ্বার দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এক অন্যরকম অনুভূতি পাবেন দর্শনার্থীরা।শিল্পকর্মের বিশাল এই আয়োজনে এশিয় চিত্রকলার বেশ কয়েকজন বরেণ্য শিল্পী ও গ্যালারি কিউরেটরের তত্ত্বাবধানে চলছে একাধিক প্রদর্শনী ও প্যানেল আলোচনা।
এই প্রদর্শনী উপভোগ করতে কোনও টিকিট বা পাসের প্রয়োজন হবে না। সবার জন্য উন্মুক্ত। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে যে কেউ প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে পারবেন কোনও রকম রেজিস্ট্রেশনের ঝামেলা ছাড়াই। প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে এসে যাতে কেউ বিরক্তবোধ না করেন সেজন্য রয়েছে নানা আয়োজন। ক্ষুধা নিবারণের জন্য প্রদর্শনীস্থল শিল্পকলা একাডেমির মাঠে স্থাপন করা হয়েছে ফুডকোর্ট। যেখানে বিখ্যাত ফুড ব্রান্ডগুলো খাবারের পসরা নিয়ে দর্শনার্থীদের রসনা বিলাশে পাশে থাকবেন। নিরাপত্তার কারণে বড় কোনও ব্যাগ বহন করা আয়োজকদের পক্ষ থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সেই সাথে কোনও ধরনের খাবার, খাবার পানীয়, তরলজাতীয় পদার্থ ও দিয়াশলাই নিয়ে গ্যালারিতে প্রবেশ করা যাবে না।
প্রদর্শনী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা) খোলা থাকবে।ঢাকা আর্ট সামিট- ২০২০ ৫ম সংস্করণে সহায়তা প্রদান করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সহযোগী হিসেবে রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। টাইটেল স্পন্সর গোল্ডেন হার্ভেস্ট।
www.dhakaartsummit.org থেকেও প্রদর্শনীর যাবতীয় তথ্য জানা যাবে।
বিডি প্রেসরিলিস /০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ /এমএম
Posted on মার্চ ২৬th, ২০২৪
Posted on মার্চ ২৬th, ২০২৪
Posted on মার্চ ২৬th, ২০২৪
Posted on মার্চ ২৫th, ২০২৪
Posted on মার্চ ২৪th, ২০২৪
Posted on মার্চ ২৪th, ২০২৪
Posted on মার্চ ২৪th, ২০২৪
Posted on মার্চ ২৪th, ২০২৪
Posted on মার্চ ৮th, ২০২৪
Posted on মার্চ ৮th, ২০২৪