২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার ম্যাচ আছে আর মাত্র দুটি। লাতিন অঞ্চলের পয়েন্ট তালিকা সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা যাঁর আছে, তিনিই জানেন এই দুটি ম্যাচ আর্জেন্টিনার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি ম্যাচে জয় ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না লিওনেল মেসির দল। এই দুটি ম্যাচ যে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিশ্বকাপ নিয়ে শঙ্কা দূর করার লড়াই।
আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব উতরাতে পারবে কি না, এ নিয়ে সন্দেহে ভুগছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। পয়েন্ট তালিকায় চোখ রাখলে এই সন্দেহের পক্ষে যথেষ্ট যুক্তিই খুঁজে পাওয়া যাবে। লাতিন অঞ্চল থেকে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে শীর্ষ ৪ দল। আর্জেন্টিনা আছে ৫-এ। এই অবস্থান না বদলালে আর্জেন্টিনাকে দিতে হবে প্লে-অফ পরীক্ষা। তবে শেষ দুটি ম্যাচ জিতলে অবশ্য পাল্টে যেতে পারে সমীকরণ। সে জন্য সবার আগে আর্জেন্টিনাকে তো জিততে হবে!
১৬ ম্যাচে এ পর্যন্ত ৬ জয়, ৬ ড্র ও ৪ হার। এর মধ্যে শেষ তিন ম্যাচেই জয়ের দেখা পায়নি আর্জেন্টিনা। এমন ভয়ানক চাপ নিয়ে বুয়েনেস এইরেসে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে পাঁচটায় পেরুর মুখোমুখি হবে সাম্পাওলির দল। শেষ ম্যাচ ১১ অক্টোবর ইকুয়েডরের মাঠে একই সময়ে। দুই বছর ধরে চলা এই বাছাইপর্বের লড়াইয়ে সাম্পাওলি আর্জেন্টিনার তৃতীয় কোচ। মানে, বাছাইপর্বে ভালো করতে কয়েকবার কোচ পাল্টাতেও দ্বিধা করেনি গত বিশ্বকাপে রানার্সআপ দলটি। কিন্তু প্রত্যাশিত ফল আসেনি। শেষ দুই ম্যাচে আর্জেন্টিনা দলকে তাই পাঁচটি জায়গা ঠিক করার পরামর্শ দিল সংবাদমাধ্যম ইএসপিএন:
গোল খরা
বাছাইপর্বে গত চার ম্যাচে সরাসরি কোনো গোল করতে পারেননি সাম্পাওলির শিষ্যরা। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে আগের ম্যাচটি আর্জেন্টিনা ড্র করেছে আত্মঘাতী গোলের আশীর্বাদে। এর আগের দুটি ম্যাচে গোলই করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। সর্বশেষ চিলির বিপক্ষে ম্যাচে লিওনেল মেসি যে গোলটি করেছিলেন, সেটিও পেনাল্টি থেকে। বাছাইপর্বে ১৬ ম্যাচে আর্জেন্টিনার গোল মাত্র ১৬টি। ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আলেসান্দ্রো সাবেলার অধীনে ৩৫ গোল করেছিলেন মেসিরা। সাবেলার সময়ে ‘কাউন্টার অ্যাটাক’ থেকে প্রতিপক্ষকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলতেন তারা। কিন্তু এবার জেরার্ডো মার্টিনো, এদগার্দো বাউজার পর সাম্পাওলির অধীনেও তেমন কিছুই চোখে পড়েনি।
বাছাইপর্বে আগের দুটি ম্যাচে সেভাবে ত্রাস ছড়াতে পারেননি পাওলো দিবালা। আরেক ফরোয়ার্ড মাউরো ইকার্দিকেও সেভাবে ব্যবহার করতে পারেননি সাম্পাওলি। শেষ দুই ম্যাচে যেহেতু আর্জেন্টিনার জয়ই চাই, তাই গোল করার দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিকল্প একেবারেই নেই।
ভঙ্গুর রক্ষণ
মাঝমাঠে বল দখলে রাখতে তিন ডিফেন্ডারে রক্ষণভাগ সাজাচ্ছেন সাম্পাওলি। এতে মাঝমাঠে অতিরিক্ত একজন খেলোয়াড় পাওয়া যায়। কিন্তু সাম্পাওলির এ কৌশল প্রতিপক্ষ দলগুলোর ‘কাউন্টার অ্যাটাক’-এর কাছে মার খেয়ে যাচ্ছে। সেন্টারব্যাক ফ্রেদরিকো ফাজিও ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের সেভাবে মার্কিং করতে পারেননি। মাঝমাঠে বল জোগানোর ক্ষেত্রেও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেননি ফাজিও। উল্টো ভেনেজুয়েলার স্ট্রাইকার জন মুরিল্লোর গোলে অবদান ছিল এএস রোমার এই ডিফেন্ডারের। সাম্পাওলি জানেন, বাকি দুই ম্যাচেও ‘কাউন্টার অ্যাটাক’ থেকে গোল আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করবে প্রতিপক্ষ। তা ঠেকাতে প্রয়োজন জমাট রক্ষণভাগ। কিন্তু সেটি কি সম্ভব?
মেসির একার লড়াই
জেরার্ডো মার্টিনো ও এদগার্দো বাউজার সময়ে এটি ছিল নিয়মিত দৃশ্য। সাম্পাওলির অধীনে প্রথম দুই ম্যাচেও দেখা গেছে সেই একই দৃশ্য—বল পেতে মাঝমাঠে নেমে আসছেন মেসি! এর কারণ সতীর্থ মিডফিল্ডারদের কাছ থেকে বলে জোগানটা ঠিকমতো পাচ্ছেন না তিনি। উরুগুয়ের বিপক্ষে ইকার্দি ম্যাচের বেশির ভাগ সময় ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাঁ-পায়ের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মার্কোস অ্যাকুনা ডানপ্রান্ত থেকে সেভাবে বল দিতে পারেননি। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে দিবালাও ব্যর্থ হয়েছেন মেসিকে ঠিকমতো বল ঠেলতে। ঠিক এ কারণেই, সতীর্থ মিডফিল্ডাররা যখন মাঠে দাঁড়িয়ে, তখন মেসিকে একাই বল কেড়ে আক্রমণের চেষ্টা করেছেন। এটা কিন্তু দলের সেরা তারকার সত্যিকারের খেলা নয়। গোল করা এবং বানানো তাঁর কাজ হলেও সেটা অ্যাটাকিং থার্ডে, মিডফিল্ডে নয়।
বৈচিত্র্যহীন মাঝমাঠ
সাম্পাওলির একাদশে হাভিয়ের মাচেরানো এখন আর ‘স্বয়ংক্রিয় পছন্দ’ নন। বার্সেলোনার এ ডিফেন্ডার আক্রমণে অভ্যস্ত হলেও খেলেছেন শুধু ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে। তবে গুইদো পিজারো হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে একেবারে খারাপ নন। কিন্তু বল দখলে রেখে আক্রমণ সাজাতে হলে চাই বৈচিত্র্যময় ও বুদ্ধিদীপ্ত মিডফিল্ডার, যার প্রতিটি পাসের পেছনে থাকবে একটাই উদ্দেশ্য—গোলমুখ খুলে দেওয়া।
ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে লুকাস বিগলিয়াকে বসিয়ে এভার বানেগাকে খেলিয়ে সে ধরনের ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন সাম্পাওলি। মেসিকে বেশ ভালো কিছু পাস দিয়ে বানেগাও তাঁর নামের প্রতি সুবিচার করেছিলেন। মাঝমাঠে বৈচিত্র্য আনতে আর্জেন্টাইন এমন খেলোয়াড়ই চাই, যিনি বানেগার কাছ থেকে বল নিয়ে মেসি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন। এমন খেলোয়াড় থাকলে বানেগাকে নিজের জায়গা ছেড়ে ওপরে ওঠার ঝুঁকি নিতে হবে না।
দুর্বল স্নায়ুর খেলোয়াড়
ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে দুর্দান্ত খেললেও চোট পেয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে পড়েন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। আর্জেন্টিনার যখন তাঁকে মাঠে দরকার, তখন চোট পেয়ে তাঁর ছিটকে পড়াটাই যেন নিয়তি! গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল এবং গত দুটি কোপা আমেরিকা ফাইনালেও ঠিক একই জিনিস ঘটেছে। ব্যাপারটিকে নিয়তি বলতেই পারেন, কিন্তু স্নায়বিক দুর্বলতাও এর জন্য দায়ী। এমন দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটলে সেটার চাপ সতীর্থদের ওপরও পড়ে। বাছাইপর্বে নিজেদের ভাগ্যটা এখনো কিন্তু আর্জেন্টিনার হাতে। শেষ দুটি ম্যাচে কোনো রকম চাপ না নিয়ে খেলতে পারলে ফলাফল অবশ্যই ইতিবাচক হবে। এই দুটি ম্যাচে স্নায়ুকে ঠিক রেখে লড়াটাই হবে আর্জেন্টাইন দলের খেলোয়াড়দের অবশ্য কর্তব্য।
Posted on নভেম্বর ৩rd, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ৩rd, ২০২৪
Posted on নভেম্বর ৩rd, ২০২৪
Posted on অক্টোবর ৩০th, ২০২৪
Posted on অক্টোবর ৩০th, ২০২৪
Posted on অক্টোবর ৩০th, ২০২৪
Posted on অক্টোবর ৩০th, ২০২৪
Posted on অক্টোবর ২৭th, ২০২৪
Posted on অক্টোবর ২৭th, ২০২৪
Posted on অক্টোবর ১৩th, ২০২৪